#জন্মদিন_স্মরণ : পাটিগণিতের দিকপাল
--------------------------------------------------------
লেখা : সংগৃহীত
বর্তমান প্রজন্মের ছেলে -মেয়েরা হয়ত নামটা শোনেই নি তবে তিনি কত বড় অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন সেটা আমরা জানি।
চৌবাচ্চা দিয়ে জল বেরোচ্ছে আর ঢুকছে ৷ তেলমাখা বাঁশে বাঁদর উঠছে আর নামছে ৷ সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে ৷ প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে গতিময় ট্রেন। চলন্ত ট্রেনের দৈর্ঘ্য মাপার কৌশল। মনে আসছে কি!! হ্যা , কে সি নাগের সেই সব বিখ্যাত পাটিগণিতের অঙ্ক , যা রাত্রে শুয়ে পড়ার পরও মাথায় ঘুরপাক খেতো।
স্কুল পেরোনো মধ্যবয়সীদের অফিসে ডেডলাইন চাপের দুঃস্বপ্নেও ফিরে আসে কেশব চন্দ্রের নাম ৷ কারণ স্কুলস্মৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে সাদা পৃষ্ঠায় কালো অক্ষরে পাটীগণিত ৷ নাম তার ‘ কে সি নাগ ‘ ৷
হুগলির গুড়াপের নাগপাড়ায় ১৮৯৩-এর ১০ জুলাই রথযাত্রার দিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
তখন গুড়াপে একমাত্র একটাই স্কুল নীলমণি।সেখানেই ভর্তি হলেন শিশু কেশব ৷ পরে ক্লাস সেভেনে ভর্তি হলেন ভস্তারা যোগেশ্বর হাই স্কুলে ৷ নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন কিষেনগঞ্জ হাই স্কুলে ৷
১৯১২ সালে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করে কেশব তখন কলকাতার রিপন কলেজের (আজকের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ ) ছাত্র ৷ ১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন আই.এ.স.সি. ৷
এরপর যোগেশ্বর স্কুলে থার্ড মাস্টারি কিছুদিন ৷ সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনি ৷ এরপর উচ্চশিক্ষা ৷ বিজ্ঞান শাখায় না করে কেশবচন্দ্র স্নাতক হলেন অঙ্ক সংস্কৃত এবং কলাবিদ্যায় ৷ পেলেন বি.এ. ডিগ্রি ৷ এরপর কিষেণগঞ্জ স্কুলে গণিতের শিক্ষক ৷ পড়িয়েছিলেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজিয়েট স্কুলেও। তাঁর পড়ানোর খ্যাতি ছাড়িয়ে পড়ল ৷ স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে এলেন কলকাতায় ৷ ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনে ৷ সেখান থেকেই প্রধান শিক্ষক রূপে অবসর নেন ৷
কলকাতায় প্রথমে থাকতেন রসা রোডের মেসে ৷ পরে দক্ষিণ কলকাতার গোবিন্দ ঘোষাল লেনে বাড়ি করেছিলেন ৷
শিক্ষকতা নিয়েই মগ্ন ছিলেন কেশবচন্দ্র ৷ স্কুলে অগ্রজ সহকর্মী ছিলেন কবি কালিদাস রায় ৷ তাঁর বাড়িতে বসত সাহিত্যিকদের আড্ডা ৷ মধ্যমণি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৷ একদিন বৈঠকী মেজাজেই কথা সাহিত্যিক প্রস্তাব দিলেন বরং বই লিখুন কেশবচন্দ্র ৷ কিছুদিন পরে জোর করে বললেন কালিদাস রায় | যে কেশবচন্দ্রের অঙ্কের ক্লাস ছিল সাহিত্যের মতোই প্রাঞ্জল ৷ যাঁর ক্লাস করতে মুখিয়ে থাকত ছাত্ররা‚ তিনি বই লিখলে আখেরে লাভ পড়ুয়াদেরই ৷
তিনের দশকে প্রকাশিত হল ‘ নব পাটীগণিত ‘ ৷ ইউ. এন. ধর অ্যান্ড সন্স থেকে ৷ কেশবচন্দ্র নাগ থেকে তিনি হলেন কে. সি. নাগ ৷ শরৎচন্দ্র তাঁর নাম দিলেন গণিত শিল্পী৷ দ্রুত জনপ্রিয় হল কে. সি. নাগের পাঠ্যপুস্তক ৷ ১৯৪২ সালে বেরোলো ম্যাট্রিক ম্যাথেমেটিক্স ৷ এত চাহিদা হল‚ যে ছাপিয়ে কূল করা যেত না ৷ বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে কে. সি. নাগের গণিত বই ৷ পাকিস্তান বোর্ডের জন্যও লিখেছেন বই ৷ আছে তাঁর বইয়ের ব্রেল সংস্করণ। সামিল হয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামেও ৷ গান্ধীজির ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হন ৷ জেল খেটেছিলেন ম্যালেরিয়ায় ভুগতে ভুগতে ৷ পরে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রস্তাব দেন ভোটে দাঁড়ানোর ৷ সবিনয়ে তা ফিরিয়ে দেন অঙ্কের মাস্টারমশা
ক্রিকেট ভালোবাসতেন।সেই খেলার ধারাবিবরণী শুনতে শুনতেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ৷ থেমে এল সব গণনা ৷ ১৯৮৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি নেমে এল গণিতশাস্ত্রজ্ঞর জীবনের শেষ অঙ্ক ৷
তাঁর ছাত্রদের তালিকায় আছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়‚ সুভাষ মুখোপাধ্যায়‚ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়‚ বিকাশ রায়‚ রঞ্জিত মল্লিকের মতো দিকপালরা ৷ তাঁর বই বিক্রির রয়ালটির টাকা চলে যায় চ্যারিটি ফান্ডে ৷ তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীমণি দেবীর নামে ফান্ড ৷ গুড়াপে লোকচক্ষুর আড়ালেই পালিত হয় তাঁর জন্মবার্ষিকী ৷
Courtesy::Sudip Bharati
No comments:
Post a Comment