Ans:- শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো
i) শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা : শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর গতানুগতিক শিক্ষার শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে তার নিজের ইচ্ছা ও আগ্রহ অনুসারে শিক্ষা গ্রহণ করার স্বাধীনতা পায় শিক্ষার্থীর বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশে নিজের ইচ্ছা অনুসারে শিক্ষা গ্রহণ করে ।
ii) সক্রিয়তাভিত্তিক শিক্ষা : আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে প্রত্যক্ষ কর্মের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীকে হাতে-কলমে শেখানো হয় সেই জন্য আধুনিক শিক্ষার মূল নীতি হলো কাজের মাধ্যমে শিক্ষা ।
iii) মানবিক সম্পর্কের উন্নয়ন : শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মানবিক সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পিতাসম বন্ধু দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শক শিক্ষার্থী এখানে নিজের চেষ্টায় শিক্ষার্থী যেমন সাহায্য প্রত্যাশা করে শিক্ষক তাকে তেমন সাহায্য করেন শিক্ষক এখানে শক্ষার্থীর একজন সহানুভূতিশীল শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন ।
iv) মনোবিদ্যার আদর্শ প্রয়োগ : শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোবিদ্যার পরীক্ষণমূলক তথ্য এবং নীতিগুলি প্রয়োগ করা হয় শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার পদ্ধতিতে যুক্তির থেকে মনস্তত্ত্বের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় ।
v) স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলা : শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার মূল শৃঙ্খলা বাহ্যিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় না বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃজনশীল সমবায়ভিত্তিক কাযকরী অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী শৃংখলার মূল্য অবহিত হবে ।
vi) জীবন কেন্দ্রিক শিখন পদ্ধতি : শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষার মূল ধারণা গ্রহণ করে বর্তমানে সারাবিশ্বে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে গড়ে উঠেছে নানারূপ শিক্ষা পদ্ধতি অনুশিক্ষণ পদ্ধতি উৎপাদন পদ্ধতি মিথস্ক্রিয়া মূলক পদ্ধতি বিশ্লেষণ পদ্ধতি ইত্যাদি ।
vii) শিক্ষার্থীকে সুনাগরিক তৈরি করা : এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী আগ্রহ অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলে ফলে সে সুবিধা-অসুবিধার নেয়ায় অন্যায় আচরণ গুলি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে আদর্শ নাগরিক রূপে তৈরি করতে পারে ।
Q: ভারতবর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে প্রারম্ভিক শৈশবের শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করুন
Ans :- প্রারম্ভিক শৈশবের শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা গুলি হল :-
i) মধ্য দিয়ে শিশুর মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে ওঠে ।
ii) সামাজিক আচরণের শিক্ষা : পরিবার শিশুটি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আচার আচরণর শিক্ষা দেয় পরিবারের মিথস্ক্রিয়া করতে করতে শিশু বিভিন্ন আচার আচরণ শিখে ফেলে ।
iii) সংস্কৃতির শিক্ষা : পরিবার স্কৃতিক চেতনার বিকাশে সহায়তা করে পরিবারে শিশুর মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায় ফলে শিশু সংস্কৃতি বোধ জেগে ওঠে ।
iv) প্রাক্ষোভিক বিকাশের শিক্ষা : পরিবার শিশুর ভাবাবেগ গুলিকে যথাযথ বিকশিত হতে সাহায্য করে সংযত প্রাক্ষোভিক আচরণ শিক্ষায় শিশুর সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে ।
v) জ্ঞানার্জনের শিক্ষা : বিভিন্ন ধরনের গানের সঙ্গে পরিচিত করে জ্ঞানার্জনের শিক্ষার প্রকৃতপক্ষে পরিবারেই শুরু হয় ।
vii) সু-অভ্যাস গঠনের শিক্ষা : পরিবার শিশুকে বিভিন্ন ধরনের অভ্যাস গড়ে তুলতে শেখায় ঐ সুঅভ্যাসগুলোর পরবর্তীকালে শিশুকে সুনাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে ।
viii) আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষা : শিশু আধ্যাত্মিক চেতনা অথবা ভালো-মন্দ নিয়ে জন্মায় না পরিবারে শিশুর মধ্যে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটায় ।
Q : শিক্ষাক্ষেত্রে ডিউই এর অবদান আলোচনা করো
Ans :- ডিউই তার শিক্ষা চিন্তা ও পরিকল্পনায় স্বাধীন ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক শিক্ষা ধারণাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবন গৃহ বিদ্যালয় জীবন দৈহিক ও মানসিক বিকাশ এবং তথ্যমূলক গুলির মধ্যে সমন্বয় রচনা করে একটি গতিশীল সামগ্রিক শিক্ষার রূপ গড়ে তুলতে চেয়েছেন শিক্ষায় ব্যক্তির স্বাধীন সৃষ্টিশীল বৃদ্ধির দিকে তিনি সমাজ বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বিত করেছেন এবং তার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক শিক্ষার রূপ তুলে ধরেছেন ডিভিশন প্রয়োগবাদী দার্শনিক রূপে শিক্ষার কোন চূড়ান্ত লক্ষ্য অস্থায়ী মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বাস রাখেন নি তিনি সমস্ত কিছুতেই ক্রিয়াশীল অভিজ্ঞতা ও বাস্তব ফল ধানের মাপকাঠিতে বিচার করার পক্ষপাতি সমালোচকগণ মনে করেন যে এই তাৎক্ষণিক মূল্যবোধের ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করলে অনেক দীর্ঘস্থায়ী মানসিক ক্রিয়ার তাৎপর্যকে অস্বীকার করা যায় যার শিক্ষামূলক গুরুত্ব অপরিসীম এর মতে শিক্ষার কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে না অর্থাৎ শিক্ষার সমন্বয় হল লক্ষ আর প্রতিক্রিয়ায় হলো লক্ষ্য পূরণের উপায় বা পদ্ধতি সামগ্রিক বিচারে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমরা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ Ruak এর সঙ্গে একমত হয় বলতে পারি 'In him or her concentrate in a special degree the progressive tenderness of his age.' Ruak এর মতে 'Dewey was a great educationist because he was a great philosopher.'
ডিউই এর পাঠক্রমিক ধারণার সঙ্গে সমন্বিত হয় তার শিক্ষা পদ্ধতির ধারণাটিও গড়ে উঠেছে ডিবি শিক্ষণে শিশু self-learning বা আত্ম শিখনের উপর জোর দিয়েছেন এই অর্থে শিশু তার আত্ম প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা লাভ করে শিশু নিজেই তার শিখনের উদ্দেশ্য ও বিষয়কে নির্বাচন করবে যার মধ্যে তার কোন বৃদ্ধিমূলক চাহিদা পূরণের প্রশ্ন বা সমস্যা যুক্ত থাকে এই সমস্যাটিকে আত্ম সক্রিয়তার মূলক কর্মপ্রয়াস এর মাধ্যমে সমাধান করাই তার আত্মজীবনী মূলক বৃদ্ধি সাধন এর ভিত্তি গড়ে তুলে এই সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াটি এর মতে শিক্ষার আদর্শ পদ্ধতিতে বুঝিয়ে থাকে প্রবলেম সলভিং মেথদ নামে পরিচিত এর মধ্যে থেকেই উদ্ভব হয়েছে এর এই শিক্ষণ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে কার্যকর হয়ে থাকে এগুলো হল
* সমস্যার পরিচয় বা নির্ধারণ
* সমস্যার বিশ্লেষণ
* সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য পরিকল্পনা
* পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করা
* অর্জিত অভিজ্ঞতা ও সাফল্য ব্যর্থতা সম্পর্কে মূল্যায়ন
ডিবি তার পদ্ধতিকে লার্নিং ড্রয়িং বা হাতে কলমে কাজ অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রক্রিয়া কে আদর্শ শিক্ষা পদ্ধতি বলেছেন শিক্ষকের ভূমিকা নির্ধারণ করতে দিবি শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধনের উপযোগী পরিবেশ সংগঠন ও পদ্ধতি যাতে বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে সে সম্পর্কে একজন পর্যবেক্ষক ও সাহায্যকারী বিশেষজ্ঞ রূপে বিচার করেছেন শিক্ষা সম্পর্কে শিশুর স্বাধীন আত্মসম্মান ধারণাটি উপস্থিত উপস্থিত করেছেন এদিকে আমরা মুক্ত শৃংখলার ধারনা বলতে পারি এই উদ্দেশ্যে বিদ্যালয় গৃহ জীবনের অনুরূপ একটি স্বাভাবিক সংগঠন হিসেবে বিদ্যালয় জীবন সংগঠনের কথা বলেছেন ।
Q: আধুনিক শিক্ষায় রবীন্দ্রনাথের অবদান আলোচনা করুন
Ans:- শিক্ষাক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান এই অল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয় নতুন শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন কোন দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভাবন না হলেও রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীল প্রতিভা শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর বিচ্ছুরিত হয় নতুন আলোর সন্ধান দিয়েছে বিশ্বভারতী শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করলেই উপলব্ধি করা যায় এ ধরনের কিছু কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করলাম :
i) আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনা মূল উৎস শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য পাঠক্রম শিক্ষণ পদ্ধতি শৃঙ্খলা শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক সর্বক্ষেত্রেই আধ্যাত্মিকতার স্পর্শ ছিল এর অর্থ এই নয় যে তার চিন্তার মধ্যে বিজ্ঞান অবহেলিত ছিল প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার ভিত্তি করেই তিনি পাঠক্রম শিক্ষাপদ্ধতি প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং বিশ্বভারতীতে তার প্রয়োগ করেছেন তবে সেখানেও আধ্যাত্মিকতা থেকে উৎস চিন্তার স্পর্শ ছিল আধ্যাত্মিকতা ও বিজ্ঞান এ দুটি পরস্পরবিরোধী বলে মনে করেন উভয়ের সমন্বয় সাধন করা তাঁর শিক্ষা চন্তার মূল লক্ষ্য ছিল পাঠক্রমে তাই মানবিক বিষয় গুলির সঙ্গে বিজ্ঞানের বিষয় গুলি কে গুরুত্ব দিয়েছিলেন ।
প্রকৃতিক দেওয়া গাছপালা বৃদ্ধ উন্মুক্ত আকাশের নিচে পাঠদান এর বিজ্ঞান ভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক নীতিগুলি অনুসরণ করে তিনি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন ক্ষেত্রেও চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ঈশ্বরের সৃষ্ট বিশ্বপ্রকৃতির শৃঙ্খলা বজায় আছে তার উপলব্ধির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী শৃংখলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে এবং তার আচরণ হবে ভালো-মন্দের নিরিখে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি প্রাচীন ভারতবর্ষের গুরুকুল ব্যবস্থা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন যেখানে ঈশ্বর ওনার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় এবং মন্ত্রোচ্চারণের শেষে শিক্ষার্থীরা যায় ।
ii) রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তির বিকাশ এর মধ্যেই শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ রাখেননি সামাজিক বিকাশে সমাজ চেতনার বিকাশ এর প্রতি তিনি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন শিক্ষার্থীদের পল্লীমঙ্গল এর জন্য নির্দিষ্ট কাজের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন এই উদ্দেশ্য বিশ্বভারতীতে শ্রীনিকেতন বিভাগ তিনি চালু করেন ।
iii) ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক শিক্ষা আন্দোলনের ভূমিকা গ্রহণ করেছে কবিগুরু সে কথা বহু পূর্বেই বলেছেন এবং বিশ্বভারতীতে তার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তিনি বিভিন্ন ভবন প্রতিষ্ঠা করেছেন বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দিনে বিশ্বভারতীতে আহ্বান করেছেন প্রত্যাশা ছিল এই শিক্ষার মধ্য দিয়ে তার স্বপ্নের বিশ্ব মানব সৃষ্টি হবে ।
iv) শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার ব্যবহারের কথা বলে শিক্ষা মনুষ্যত্বের প্রতি তার গভীর জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন ।
v) শিক্ষার সঙ্গে যে বৃত্তির নিগূঢ় সম্পর্ক আছে ব্যক্তি মানুষ ও সমাজের প্রত্যাশা যে ব্যক্তিকে স্বনির্ভর করে তুলে সমাজের উন্নয়ন করে কবিগুরু তা সম্ভব হবে উপলব্ধি করে বাংলার কুটির শিল্পের কোন উদ্ধারের জন্য বিশ্বভারতীতে শিল্পসদন প্রতিষ্ঠা করেন ।
এইভাবে ব্যক্তি ও সমাজ বিকাশের বিভিন্ন দিকে শিক্ষার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এবং তার প্রয়োগের ব্যবস্থা করে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা কেমন উন্নত স্তরে নিয়ে গেছেন যে এই একবিংশ শতাব্দীতেও তার প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন ওঠেনা সমস্ত দিক থেকেই রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মহান তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার জন্য ব্যয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন কোন একটি জাতির পরিচয় পাওয়া যায় তা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে তিনি সমস্ত রকম কুসংস্কার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি ভারতীয় জনগণকে শিক্ষাব্যবস্থাকে সর্বোপরি ভারতবর্ষকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং ভাতৃত্ববোধ ও বিশ্বশান্তির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।
No comments:
Post a Comment