শিক্ষার অধিকার আইন
শিক্ষার অধিকার আইন আসলে হল Right of Children to Free and Compulsory Education Act, 2009 বা শিশুদের বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন । এই বিলটি 4 আগস্ট 2009 ভারতীয় সংসদে প্রণয়ন করা হয় এবং সফলভাবে শিক্ষার অধিকার আইন ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 21A এর অধীনে আনা হয় 26 আগস্ট 2009 । 1 এপ্রিল 2010 এ আইনটি কার্যকর করা হয়, এতে শিক্ষাকে প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকারে পরিণত করা হয় ।
শিক্ষার অধিকার আইনটি কি নিয়ে ?
* 6 থেকে 14 বছর বয়সী প্রতিটি শিশুর বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে । 86 তম সংবিধান সংশোধনী আইন অনুযায়ী সংবিধানের 21A অনুচ্ছেদে এ কথা বলা হয়েছে । এই সংশোধনীর মাধ্যমেই শিক্ষার অধিকার আইন প্রয়োগ করা হবে ।
* সরকারি স্কুল গুলি প্রতিটি শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষা দেবে এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দ্বারা বিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হবে । বেসরকারি স্কুলগুলো মোট পড়ুয়ার অন্তত 25% শিশুকে বিনামূল্যে ভর্তি করবে ।
* গুনমানসহ বুনিয়াদি শিক্ষার সমস্ত দিতে নজরদারি চালাতে বুনিয়াদি শিক্ষার ভারতীয় কমিশন (National Commission for Elementary Education) তৈরি করা হবে ।
শিক্ষার অধিকার আইন (RTE) 2009 এর প্রধান বৈশিষ্ট্য :
* ভারতের 6 থেকে 14 বছর বয়সী সকল শিশুর জন্য বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষা । বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ন করার আগে কোনো শিশুকে ফেল করানো বা বহিষ্কার করা যাবে না ।
* যদি 6 বছর বয়সের বেশি বয়সী কোনো শিশু স্কুলে ভর্তি না হয়ে থাকে বা তার বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ণ না হয়ে থাকে, তাহলে তাকে তার বয়সের উপযোগী শ্রেণীতে ভর্তি করতে হবে । যদি কোনো শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী কোন শ্রেণীতে ভর্তি করে দেওয়া হয়, তাহলে সে যাতে অন্যদের সঙ্গে একই মানে পৌঁছতে পারে, সে জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে । বুনিয়াদি শিক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে ভর্তি হওয়া প্রতিটি শিশু বুনিয়াদি শিক্ষা সম্পূর্ন হওয়া পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা পাবে, এমনকি তার বয়স যদি 14 বছর পেরিয়ে যায় তা হলেও ।
* বুনিয়াদি শিক্ষায় ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে শিশুর বয়স তার জন্মের শংসাপত্র অনুযায়ী নির্নিত হবে । এই শংসাপত্র জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ নিবন্ধন আইন 1856 বা নির্দেশিত অন্য কোন নথি দ্বারা প্রমাণিত হলেই হবে । শুধুমাত্র বয়সের প্রশংসাপত্রের অভাবে কোন শিশুর ভর্তি আটকানো যাবেনা ।
* যে শিশু বুনিয়াদি শিক্ষা শেষ করবে তাকে শংসাপত্র দিতে হবে ।
* ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত নির্দিষ্ট করার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে প্রাথমিক স্তরে 30:1, উচ্চ প্রাথমিক স্তরে 35:1 ।
* শিক্ষার গুনমানের উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
* অর্থনৈতিক দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভাগাভাগি করে বহন করবে ।
* শিক্ষকদের পেশাদারি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে ।
শিক্ষার অধিকার আইন চালু করার জন্য সরকারের কর্তব্য
* অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিশু শিক্ষার অধিকার আইন চালু করার আগে স্কুলের ব্যবস্থা করা সরকারের কর্তব্য ।
* প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের জন্য এক কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে ।
* ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের জন্য তিন কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে ।
* বিদ্যালয় গরিব বঞ্চিত শ্রেণীর বাচ্চাদের প্রতি কোনো রকমের ভেদাভেদ করা যাবে না ।
স্থানীয় সরকারের কর্তব্য
* 6 থেকে 14 বছরের সকল শিশুদের অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা দান ।
* নিকটবর্তী অঞ্চলে বিদ্যালয় স্থাপন করা । দরকার হলে বিকলাঙ্গ বাচ্চাদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা ।
* দুর্বল শ্রেণীর বাচ্চাদের সাথে পক্ষপাত যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখা ।
* এলাকায় 6 থেকে 14 বছর বয়সী শিশুদের তালিকা প্রকাশ ও তাদের স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করা ।
* শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানোর পাশাপাশি তাদের প্রতিদিনের উপস্থিতি এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপর নজর রাখা হবে ।
* বিদ্যালয়, শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষণ সামগ্রীর যথাযথ ব্যবস্থা করা ।
* শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ।
* বাইরে থেকে আসা পরিবারের শিশুদের স্কুলে ভর্তি করানো ।
* শিশুদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও অভিযোগের প্রতিকার করা ।
পিতা-মাতা ও স্থানীয়দের কর্তব্য
প্রত্যেক পিতা-মাতা অবস্থান ঈদের কর্তব্য হবে তারা তাদের শিশুদের নিকটবর্তী বিদ্যালয় অবশ্যই ভর্তি করাবেন ।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি (SMC)
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কমিটি বানানো হয়েছে যা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বা স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি নামে পরিচিত । এই কমিটিতে কমপক্ষে তিন চতুর্থাংশ সদস্য মাতা পিতা বা স্থানীয় অভিভাবক থাকবেন । এই কমিটিতে কমপক্ষে 50% মহিলা সদস্য থাকবেন ।
বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির দায়িত্ব
* বিদ্যালয়ের কাজকর্ম ঠিকমত চলছে কিনা তা দেখাশুনা করা ।
* বিদ্যালয় উন্নয়নে পরিকল্পনা তৈরি করা ।
* বিদ্যালয়ের ফান্ড / তহবিলের টাকা সঠিক কাজে সঠিক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা দেখা ।
* বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহযোগিতা করা ।
শিক্ষক-শিক্ষিকার দায়িত্ব ও কর্তব্য
* পাঠক্রিয়া পরিচালনা, শিক্ষার্থীকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা, বিদ্যালয় পরিচালনা এবং সামগ্রিকভাবে সমাজ গঠনে ভূমিকা পালন করা ।
* পাঠ্যক্রম পরিচালনা ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সমাপ্ত করা ।
* শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন করা ও তাকে সাহায্য করা ।
* শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, শিক্ষার অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত অভিভাবকদের অবহিত করা ।
পর্যালোচনা
শিক্ষা ক্ষেত্রে যে খরচ হবে তা কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ই সরকারই বহন করবে । কেন্দ্র:রাজ্য = 55:45 , উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলির জন্য সেই অনুপাত 90:10
প্রশ্নাবলী
Q: RTE আইনত নাম কি ?
Ans:- Right of Children to Free and Compulsory Education Act.
Q: RTE 2009 সংবিধানের কত নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে ?
Ans:- 21-A
Q: RTE কখন কার্যকর হয় ?
Ans:- 1 এপ্রিল 2010.
Q: RTE অনুযায়ী কত বছর বয়সী শিশুদের বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে ?
Ans:- 6-14 বছর বয়সী শিশুদের ।
Q: RTE অনুযায়ী প্রাথমিক স্তরে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত কত ?
Ans:- 30:1
Q: RTE অনুযায়ী উচ্চ প্রাথমিক স্তরের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কত ?
Ans:- 35:1
Q: শিক্ষার্থীদের বয়সের প্রমাণপত্র না থাকলে কি বিদ্যালয় ভর্তি করা যাবে ?
Ans:- ভর্তি করা যাবে ।
Q: প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর জন্য বাড়ি থেকে কত দূরত্বের মধ্যে বিদ্যালয় হতে হবে ?
Ans:- বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকতে হবে ।
Q: SMC এর পুরো নাম কি ?
Ans:- School Management Committee.
Q: উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য এর ক্ষেত্রে শিক্ষাক্ষেত্রে কেন্দ্র : রাজ্য খরচ এর অনুপাত কত ?
Ans:- 90:10
No comments:
Post a Comment